এম এ কবীর, ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরের আলোচিত সুদে কারবারি বাকেরুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শুক্রবার তাকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। এ তথ্য নিশ্চিত করে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আশিকুর রহমান জানান, যারা সুদে ব্যবসা করছে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। একে একে সব সুদে কারবারিদেরকে গ্রেপ্তার করা হবে।
গ্রেপ্তার হওয়া বাকের পৌরসভা এলাকার কাজী পাড়া গ্রামের মৃত মুছা আলী সর্দ্দারের ছেলে।
জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে এলাকার অভাবগ্রস্থ মানুষের সুযোগ কাজে লাগিয়ে তাদের কাছ থেকে ব্যাংক চেক ও সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে চড়া সুদে টাকা দিয়ে আসছিল বাকেরুজ্জমান। প্রতি লাখে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে মাসে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত সুদ নিয়ে থাকেন। এতে কেউ অপারগতা প্রকাশ করলে তার নামে আদালতে মামলা ঠুকে দেন।
অনেক সময় আবার নিজস্ব লোকজন দিয়ে তাদেরকে ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা আদায় করে থাকেন। এসব ঘটনায় বাকেরের ভয়ে বাড়ি ছাড়া রয়েছে পৌরসভা কাজীপাড়া এলাকার সাইদুর রহমান ও তার স্ত্রী বিউটি আক্তার, আদর্শপাড়া এলাকার আলমগীর হোসেন, একই এলাকার আবুল কাসেম ও আবুল খায়ের, দুর্গাপুর এলাকার সামাউল বিশ্বাস, ভোমরাডাঙ্গা বায়েজিদ খান ও মসিউর ড্রাইভারসহ বেশ কয়েকজন।
ভুক্তভোগী সাইদুর জানান, ২০১৩ সালে ব্যবসায়ের কাজের জন্য তার স্ত্রী বিউটি আক্তার স্বাক্ষরিত সাদা ষ্ট্যাম্প ও তিনটি চেকের পাতা জমা রেখে সুদে কারবারি বাকেরের কাছ থেকে ৬ লাখ ২০ হাজার টাকা লোন করে। এ টাকার বিপরীতে প্রতি মাসে ৩১ হাজার টাকার সুদ দিয়ে আসছিল। এভাবে ৬ বছরে তাকে সুদের টাকাসহ মোট ২৩ লাখ ১৪ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়। টাকা পরিশোধ করার পরেও বাকের কাছে থাকা ষ্ট্যাম্প ও চেক ফেরত না দিয়ে উল্টো আরো টাকা দাবি করে। এই টাকা দিতে আমি অপারগতা প্রকাশ করলে আদালতে আমাদের স্বামী-স্ত্রীর নামে দুটি চেক ডিজঅনার মামলা করে বাকের।
তিনি আরও জানান, হয়রানিমূলক মামলায় জামিনে আমরা মুক্তি পেলেও সুদে কারবারি এলাকার প্রভাবশালীদের দিয়ে আমাদের উপর হুমকি-ধামকি দিতে থাকে। এক পর্যায়ে পুলিশ প্রশাসনের কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা না পেয়ে প্রাণভয়ে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছি। কিছুদিন আগে আমার বাবা মারা যান। খবর পেয়ে বাবার দাফনের জন্য বাড়িতে আসি। পরের দিন সন্ধ্যায় বাকের তার ক্যাডার বাহিনী নিয়ে আমার বাড়িতে এসে ১১ লাখ ৩০ হাজার টাকা দাবি করে এক পর্যায়ে বলে টাকা না দিলে আমাদেরকে তুলে নিয়ে গিয়ে খুন-জখম করবে। তখন আমাদের আত্মচিৎকারে প্রতিবেশিরা এগিয়ে এলে তারা চলে যায়। পরে ওই রাতেই আমরা প্রাণভয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে আসি।
আরেক ভুক্তভোগী আলমগীর হোসেন বলেন, আমার মোটরসাইকেলের শো-রুম ছিল। আমি ২০১২ সালে আমার ব্যবসায়িক কাজে নগদ টাকা প্রয়োজন হলে ব্যাংক চেকের পাতা বাকেরের কাছে জমা রেখে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা নিই। প্রতি মাসে লাখ প্রতি ৮ হাজার টাকা সুদ দিই তাকে। টাকা নেয়ার পর থেকে ৫ বছরে আমি সুদসহ মোট ৬ লাখ টাকা পরিশোধ করি।
তিনি আরও জানান, টাকা পরিশোধ করার পরও বাকের আমার চেক ফেরত না দিয়ে উল্টো আরো টাকা দাবি করে। টাকা দিতে ব্যর্থ হলে আমার নামে চেক ডিজঅনার মামলা দেয়। আমি জামিন নেয়ার পর থেকে বাকের তার ক্যাডার বাহিনী নিয়ে আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দিতে থাকে। এক পর্যায়ে তার ভয়ে বাড়ি ঘর ছেড়ে পালিয়ে আসি। এ বিষয়ে ভুক্ত ভোগীরা সংবাদ সম্মেলন করে তাদের দুর্ভোগের কথা জানালে সংবাদপত্রে সংবাদও প্রকাশিত হয়।
Leave a Reply